Admission
গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - বয়ন তন্তু - তন্তুর শ্রেণিবিভাগ

বহু বছর আগে থেকে বয়ন তন্তুর শ্রেণিবিভাগ বিভিন্নভাবে হয়ে এসেছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে শ্রেণিবিন্যাসের ধরনও বদল হয়েছে। প্রথম দিকের শ্রেণিবিভাগ ছিল বেশ সহজ সরল। যেমন- প্রাণিজ, উদ্ভিজ্জ, খনিজ ইত্যাদি। কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কারের ফলে আগের শ্রেণিবিভাগ অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে একই গুণসম্পন্ন তত্ত্বদের এক দলে ফেলে শ্রেণিবিভাগ করার প্রবণতা দেখা দেয়। এর ফলে জনগণ একই শ্রেণিভূক্ত তন্তুগুলোর গুণাগুণ, যত্ন ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়।

উৎস অনুযায়ী বয়ন তন্তুকে প্রধানত : দুইভাগে ভাগ করা যায়-১। প্রাকৃতিক তন্তু এবং ২। কৃত্রিম তন্তু

১। প্রাকৃতিক তন্তু (Natural fiber )- প্রাকৃতিক তন্তুর মধ্যেও শ্রেণিভেদ রয়েছে। যেমন:-

(ক) উদ্ভিজ্জ তন্তু (Vegetable fibers) - উদ্ভিজ্জ তন্তু উদ্ভিজ্জ জগৎ থেকে পাওয়া যায়, যা সেলুলোজ দিয়ে গঠিত। এরা সেলুলোজ ভিত্তিক হওয়ায় এদের সেলুলোজিক তন্তু বলে। এরা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে

  • বীজ তন্তু (Seed hairs) - বীজের চারপাশে যে আঁশগুলো অবস্থান করে তাদের বীজ তন্তু বলে। যেমন-তুলা, ক্যাপক ইত্যাদি ।
  • উদ্ভিজ্জ বাকল বা বৃক্ষ কোষ তন্তু (Bast fibers) - গাছের কাণ্ড থেকে এ তন্তু পাওয়া যায়। যেমন-পাট, ফ্ল্যাক্স, র‍্যামি, শণ ইত্যাদি।
  • পল্লব তন্তু (Leaf fibers) - এদের ভাসকুলার ফাইবারও বলে। গাছের পাতা, মূল বা ডাটায় পাওয়া যায়। যেমনপিনা, সিসাল ইত্যাদি।
  • বাদামের খোলস তন্তু (Nut husk fibers) - যেমন- নারকেলের ছোবড়া থেকে প্রাপ্ত তন্তু ।

(খ) প্রাণিজ তন্তু (Animal fibers) - প্রাণিজ তন্তু প্রাণী বা পোকামাকড় থেকে পাওয়া যায়। এদের মূল

উপাদান প্রোটিন, তাই এদের প্রোটিন তন্তু বলেও গণ্য করা হয়। যেমন-

  • প্রাণিজ লোম তন্তু (Animal hair fibers) - বিভিন্ন প্রজাতির ভেড়া ও ভেড়া-জাতীয় পশু যেমন আলপাকা, মোহেয়ার, এঙ্গোরা ইত্যাদির লোমকে পশমতন্তু হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।
  • প্রাণিজ নিঃসরণ তন্তু (Animal secretion fibers) - রেশম বা গুটি পোকার লালা নিঃসৃত পদার্থ সিল্ক তন্তু হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

(গ) খনিজ তন্তু (Mineral fibers) - মাটির নিচে বিভিন্ন ধরনের কঠিন শিলার স্তরে স্তরে এক প্রকার আঁশ জমা হয়, যা এসবেসটস নামক বয়ন তন্তু হিসেবে স্বীকৃত। এরা আয়রন এবং এরূপ অন্যান্য ধাতু যেমন- সোডিয়াম, এলুমিনিয়ম বা ম্যাগনেশিয়ামের জটিল সিলিকেট হয়। এরূপ তন্তু এসিড, মরিচিকা ও আগুণ প্রতিরোধক্ষম।

(ঘ) প্রাকৃতিক রাবার (Natural rubber) - প্রাকৃতিক রাবারকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংকোচন করে বিভিন্ন প্রকার তন্তু ও সুতা তৈরি করা হয়।

 

 

প্রাকৃতিক তন্তুর শ্রেণিবিভাগ

প্রাকৃতিক তন্তু

উদ্ভিজ্জ তন্তু

প্রাণিজ তন্তু

খনিজ তন্তু

বীজ তন্তু

বৃক্ষ কোষ তন্তু

পল্লব তন্তু

বাদামের খোলস তন্তু

তুলা,

ফ্যাক্স, পাট, হ্যাম্প, র‍্যামি

সিসাল, ম্যানিলা

নারকেলের ছোবড়া

এসবেসটস

প্রাণিজ নিঃসরণ প্রাণিজ লোম

উল

রাবার তন্তু

প্রাকৃতিক রাবার

ক্যাপক

রেশম

 

২। কৃত্রিম তন্তু (Man made fiber) - যে সব তন্তু প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়নি, মানুষ বিভিন্ন পদার্থ বা রাসায়নিক দ্রব্যাদির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে উদ্ভাবন ঘটিয়েছে, তাদের কৃত্রিম তন্তু বলে। কৃত্রিম তন্তুগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে কারখানায় তৈরি করা হয়। এসব তন্তুর কাঁচামাল প্রাকৃতিক বা রাসায়নিক হতে পারে। এরূপ তন্তুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাই এদের খাটো বা লম্বা হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। উৎস ও রাসায়নিক গঠনের উপর ভিত্তি করে কৃত্রিম তন্তুগুলোকে ছয়ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

ক)সেলুলোজিক তত্ত্ব - ছোট তুলার আঁশ, বাঁশের বা কাঠের গুঁড়া ইত্যাদি প্রাকৃতিক সেলুলোজ ভিত্তিক পদার্থের সাথে রাসায়নিক উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কৃত্রিম সেলুলোজিক তন্তু উৎপাদন করা হয় ৷ যেমন – কিউপ্রামোনিয়াম রেয়ন, ভিসকোস রেয়ন ইত্যাদি।

খ)পরিবর্তিত সেলুলোজিক তন্তু - প্রাকৃতিক সেলুলোজ ভিত্তিক পদার্থের সাথে রাসায়নিক উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সেলুলোজের গঠন পরিবর্তন করে এ ধরনের তন্তু উৎপাদন করা হয়। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে সেলুলোজ বিশুদ্ধ অবস্থায় থাকে না। যেমন- এসিটেট, ট্রাই এসিটেট ইত্যাদি।

গ) সাংশ্লেষিক তন্তু – প্রাকৃতিকভাবে সেলুলোজভিত্তিক নয় এমন পদার্থ যেমন-কার্বন, হাইড্রোজেন, -- অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদির সাথে রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়া ঘটিয়ে যখন এমন পদার্থ সৃষ্টি করা যায়, যা তন্তুর গুণাবলি প্রকাশ করে- সেগুলোকে সাংশ্লেষিক তন্তু বলে। নানা প্রকার প্রাকৃতিক উপাদান যেমন কয়লা, বায়ু, পানি, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি থেকে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি সংশ্লেষণ পদ্ধতিতে আলাদা করে নিয়ে আবার বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় একত্র করে এরূপ তন্তু উৎপাদন করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে- নাইলন, পলিয়েস্টার, একরাইলিক, ভিনিয়ন, সরন ইত্যাদি তন্তু ।

ঘ) প্রোটিন তন্তু - ধান, গম, প্রভৃতি শস্য এবং দুধের প্রোটিনকে রাসায়নিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে কৃত্রিম প্রোটিন তন্তুতে রূপান্তরিত করা যায়। তবে বাণিজ্যিক ভাবে এরা সফলতা লাভ করে নি। যেমন- এজলন, ক্যাসিন ইত্যাদি ।

ঙ) খনিজ তন্তু – বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য এককভাবে বা সংমিশ্রণ অবস্থায় প্রক্রিয়াজাত করে খনিজতন্তু তৈরি - করা যায়। যেমন সিলিকা, লাইমস্টোন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান একত্র করে গঠন করা হয় গ্লাস তন্তু ।

চ) ধাতব তন্তু – এলুমিনিয়ম, রূপা, সোনা প্রভৃতি ধাতুকে খনি থেকে বিভিন্ন অপদ্রব্যের সাথে উত্তোলন করার পর পরিশুদ্ধ করে নানা উপায়ে কৃত্রিম ধাতব তন্তু তৈরি করা হয়।

ছ)অন্যান্য কৃত্রিম তন্তু – এলজিনেট, টেফলন ইত্যাদিও মানুষ দ্বারা তৈরি তন্তু । সমুদ্র শৈবাল থেকে প্রাপ্ত এলজিনেট তন্তু পানিতে দ্রবীভূত হওয়ায় এরূপ তন্তুর গুরূত্ব তুলনামূলকভাবে কম ।

প্রাথমিক পর্যায়ে বয়ন তন্তুর জন্য প্রাকৃতিক উৎস ও যোগানের উপর নির্ভর করতে হলেও ঊনবিংশ শতাব্দির প্রারম্ভে মানুষ কৃত্রিম তন্তুর আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। দেখা গেছে, ১৯০০ সাল থেকে কৃত্রিম তন্তুর উদ্ভাবন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৯৩০ সালের পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা আরও ডজনখানেক কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কারে সফল হন

কাজ – প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম তন্তুর শ্রেণিবিভাগ পোষ্টারের মাধ্যমে উপস্থাপন কর।

Content added By
Promotion